১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

দেশের সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে : আওয়ামী লীগ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টদের মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন নির্দেশনাকে ‘দায়মুক্তি’ বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলটি বলছে, ‘জনগণ এই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ইনডেমনিটি বাতিল করে; সকল হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও দেশের সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিচার এই বাংলাদেশের মাটিতেই করবে।’ আজ মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ভ্যারিফাই ফেসবুকে পোস্ট করা বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয় ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কাউকে হয়রানি করা হবে না। আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৫ আগস্টের খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়েও রক্ষা করতে পারেনি খন্দকার মোশতাক। জনগণ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মহান জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছে। ইনশা আল্লাহ খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না আবারও বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ এই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ইউনূসের ইনডেমনিটি বাতিল করে সকল হত্যাকারী, লুণ্ঠনকারী অগ্নিসংযোগকারী ও দেশের সম্পদ বিনষ্টকারীদের বিচার এই বাংলাদেশের মাটিতেই করবে।’ সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে, এর মানে হলো যারা হাজার হাজার পুলিশ হত্যা করেছে, হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে পিটিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে আহত করেছে, অনেককে আজীবনের জন্য পঙ্গু করেছে, লক্ষ কোটি টাকার জনগণের সম্পদের ক্ষতি করেছে, তাঁদের সকল অপকর্মের জন্য দায়মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার বিচার বন্ধে খন্দকার মোশতাকের দেওয়া ইনডেমনিটির সঙ্গে তুলনা করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। যদিও দলটি ক্ষমতায় থাকতে ওই ইনডেমনিটির জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করা হতো। জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতারা বক্তব্য দিতেন। চলতি মাসের ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্যারিফাই ফেসবুকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল সেখানে শেখ হাসিনাকে দলীয় সভাপতি হিসেবেই সম্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে দলীয় সভাপতি বলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও বলা হয়েছে। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক দেশত্যাগ করিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার পর অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে ড. ইউনূস ও তার পরিষদ হত্যাকারী ও দেশের সম্পদ ধ্বংসকারী, চক্রান্তকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চাচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ জুলাই থেকে যে সকল হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ সংগঠিত হয় সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন এবং জাতিসংঘের কাছে উন্নত প্রযুক্তিসহ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুডিশিয়াল কমিটির তদন্ত স্থগিত করে দিয়েছে বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এর কারণ সহজে অনুমেয় যে ইউনূস চান না জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত যত ধরনের অপরাধ হয়েছে তার বিচার হোক, এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের চিহ্নিত করা হোক এবং এদের দোষী প্রমাণিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অংশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য তুলে ধরে আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এর মানে হলো আন্দোলনের সময় যত হত্যা হয়েছে তা প্রি-প্লানিংয়ের মাধ্যমেই হয়েছে। যারা এই কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে এবং ৫ আগস্ট থেকে হাজার হাজার মানুষকে, পুলিশকে হত্যা করেছে তাঁরা চিহ্নিত হোক ও বিচারের মুখোমুখি হোক তা ইউনূস চান না।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দেওয়ার মাধ্যমে বিনা তদন্তে ও বিনা বিচারে ক্ষমা করে দিয়েছেন একই সঙ্গে তিনি ও তাঁর সহযোগীরাও এসব হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত, তাই প্রমাণিত হয়।

ওবায়দুল কাদের ‘পালাব না’ বলে কোথায় গেলেন, জানেন না আওয়ামী লীগ নেতারাও

‘আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব’—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে গত বছর ২৯ জানুয়ারি এ কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেড় বছরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। বিএনপির আন্দোলন নস্যাৎ করে গত ৭ জানুয়ারি একতরফা ভোট করে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের কোথায়, তার কোনো হদিস নেই। শারীরিকভাবে আত্মগোপনে। নেই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াতেও। সরকার পতনের আগে যিনি প্রায় প্রতিদিন বক্তব্য-বিবৃতি দিতেন, গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য গত ২ মাস ১০ দিন ধরে তাঁর কোনো বক্তব্য-বিবৃতি নেই। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালাব না’ বক্তব্য নিয়ে গান তৈরি হয়েছে, যা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ছাড়া তাঁর নানা বক্তব্য নিয়ে ‘মিম’ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে ‘প্যারোডিও’ হচ্ছে। সরকার পতনের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের বড় অংশই ভারতে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুধু শীর্ষ নেতা নন, মাঝারি এবং সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাও ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক নেতা বিদেশে থেকে গণমাধ্যমকর্মী, দেশে-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কমবেশি যোগাযোগ রাখছেন। গত প্রায় আড়াই মাসে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁদের কেউ ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এমনকি ওবায়দুল কাদের কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এমন তথ্যও নেই কারও কাছে। ‘খেলা হবে’ বলে নিজেই লোকচক্ষুর আড়ালে: ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ৫ আগস্টেই যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কারও কারও মতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়েছে, এমন তথ্য নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে থাকা অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, এমন বেশ কিছু অডিও প্রকাশ পেয়েছে। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের কারও সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ৫ আগস্টের আগেও প্রায় প্রতিদিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের আন্দোলনের সময় তিনি পাল্টা সভা-সমাবেশে নিয়ে মাঠে থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ বলে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই চলে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালে, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দলে কাদেরকে নিয়ে বিস্ময়: ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, ছাত্রজীবন থেকেই ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দিতে পারদর্শী ছিলেন। এক–এগারোর আগে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেওয়ার বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তখন তিনি আওয়ামী লীগের ভুঁইফোড় নানা সংগঠনের ব্যানারে আলোচনা সভা ও গোলটেবিলে অংশ নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য দিয়েছেন। তখন দলের অনেকেই তাঁকে ‘জাতির বিবেক’ বলে টিপ্পনী কাটতেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে ওবায়দুল কাদেরকে সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। দলের ভেতরে আলোচনা আছে যে ভুঁইফোড় সংগঠনের কর্মসূচিতে গিয়ে সরকারের নানা সমালোচনা করার পর তাঁকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। মন্ত্রী হওয়ার পর সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ২০১৬ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদেরের গণমাধ্যমে উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়। এরপর তিনি টানা তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সেই ওবায়দুল কাদের সরকারের পটপরিবর্তনের পর নিখোঁজ হয়ে গেলেন! এটা দলের নেতা-কর্মীদের কাছে যেমন বিস্ময়ের, আবার ক্ষোভেরও জন্ম দিয়েছে। ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতেন না। এখন সুযোগ না পাওয়া নেতারা সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি নীরব আছেন। ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন নিজ মন্ত্রণালয় কিংবা দলের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন এবং গণমাধ্যমে সেই বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। কোনো কর্মসূচি না থাকলে গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য বিবৃতি পাঠাতেন। করোনা মহামারির সময় সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত ভিডিও ব্রিফিং করতেন। ২০১৯ সালের মার্চে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন মাস দেশে ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই সময়ের পর এবারই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতি নেই গণমাধ্যমে। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের যেকোনোভাবে গণমাধ্যমের প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করতেন। কী পরিস্থিতিতে তিনি গত আড়াই মাস গণমাধ্যম ও নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে আছেন, তা তিনিই ভালো জানেন। ক্ষুব্ধ দলের কর্মীরা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, সেই সময় ৩১ জুলাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বরাবরের মতো অন্যদের সুযোগ না দিয়ে নিজে বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করতে চেয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। ওই দিন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেন। একপর্যায়ে মিলনায়তন ছেড়ে তড়িঘড়ি চলে যান তিনি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে সেদিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, দল বিপদে পড়ার পর সাবেক ছাত্রনেতাদের ডাকা হয়েছে। অথচ অন্য সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন দলের সাধারণ সম্পাদক। মুষ্টিমেয় কিছু ‘চাটুকার’ নিয়ে চলতেন তিনি। এ জন্যই তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ছাত্র আন্দোলনে দল ও সরকারের ব্যর্থতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ বেড়েছে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। আর এই দোষারোপের কেন্দ্রবিন্দুতে ওবায়দুল কাদেরকেও রাখছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে এলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন কোনো কোনো নেতা। ওবায়দুল কাদেরের সশরীর এবং গণমাধ্যমে অনুপস্থিতির সময়টাতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলের ‘ভেরিফায়েড’ ফেসবুক পেজে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তবে তাঁদের এসব বক্তব্য নিয়েও দেশে থাকা দলের কোনো কোনো নেতা-কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, বিদেশে থেকে সরকারকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের বিপদ বাড়ছে। ফেসবুকেও ছবি আসছে না কাদেরের : ওবায়দুল কাদের তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সর্বশেষ পোস্ট দেন গত ৫ জুলাই। ওই দিন তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া-১ নামের এলাকায় নানা ভঙ্গিমায় নিজের ১২টি ছবি পোস্ট করেন। এই পোস্টে এক লাখের বেশি লাইক, লাভ,

শেষ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা হাতে মাত্র সাড়ে ২৮হাজার টাকা ছিল, ১৫ বছরই সুদ থেকে আয় করেছেন

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তেন প্রায়ই ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে ‘সুদখোর’ বলে ব‍্যঙ্গ করতেন। অথচ সেই শেখ হাসিনাই গত ১৫ বছরে ব‍্যাংক সুদ থেকে আয় করেছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, প্রচলিত আইনভঙ্গ করে পূর্বাচলে নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রতি মেয়াদেই শেখ হাসিনার আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ‍্য হারে। গত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামায় এসব তথ‍্য প্রকাশ করেছেন তিনি নিজেই। নির্বাচনের আগে আটটি তথ‍্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনে হলফনামা জমার বিধি-বিধান রয়েছে। শেখ হাসিনার নির্বাচনি চারটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে তাঁর আয়, দায়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, মামলা এবং অন‍্যান‍্য বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ‍্য পাওয়া যায়, যা তুলে ধরা হলো : সুদ থেকে নিয়মিত আয় করতেন শেখ হাসিনা: শেখ হাসিনার ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লষণ করে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বছরগুলোতে তিনি সঞ্চয়পত্র ও ব‍্যাংকে জমাকৃত আমানত, এফডিআর থেকে নিয়মিতই অর্থ আয় করেছেন। সেই আয়ের বিবরণী তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের হলফনামায় দেখিয়েছেন শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত থেকে বছরে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭ টাকা আয় করেছেন। ২০১৩ সালে দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায় তিনি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক আয় করেছেন ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ১৮৫ টাকা। ২০১৮ সালে একই উৎস থেকে তিনি ১২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হলফনামায় শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা এবং এফডিআর ও ব‍্যাংক সুদ থেকে ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৬ টাকা। ব‍্যাংকে জমা রাখা অর্থের ওপর ব‍্যাংক সাধারণত সুদই (ইন্টারেস্ট) লভ‍্যাংশ হিসেবে দিয়ে থাকে। তবে শেখ হাসিনার কত টাকা থেকে এই অর্থ উপার্জন করেছেন, তা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি তাঁর আমানত কোন ব‍্যাংকে গচ্ছিত ছিল, সেটাও জানা যায়নি। প্রতি মেয়াদে শেখ হাসিনার আয় বেড়েছে:  ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার কৃষি খাত, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন‍্যান‍্য ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক আয় ছিল ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২০১৩ সালে দাখিল করা হলফনামায় এ আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয় ৭০ লাখ ১৪ হাজার ১০ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি খাত, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন‍্যান‍্য ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৎস‍্যখামার, চাকরি এবং গাছ বিক্রয়ের আয়। ২০১৮ সালের হলফনামায় আয় আরও বেড়ে হয় ৭৬ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৪ টাকা। আয়ের উৎস ছিল কৃষি খাত, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন‍্যান‍্য ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত, ব‍্যবসা (রয়্যালিটি) এবং অন‍্যান‍্য খাত। ২০২৪ সালে হাসিনার বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ হাজার ৯ হাজার ৩৪৬ টাকা। আয়ের উৎস ছিল কৃষি খাত,  শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব‍্যাংক আমানত, চাকরি, এফডিআর ও ব‍্যাংক সুদ এবং রয়‍্যালিটি। তবে এ বছর বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন‍্যান‍্য ভাড়া থেকে কোনো আয় দেখানো হয়নি। ব‍্যাংক স্থিতিতে উত্থান-পতন: ২০০৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ টাকা। ২০১৩ সালে জমার পরিমাণ দেখানো হয় ১ কোটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৩৫ টাকা। ২০১৮ সালে জমার পরিমাণ দেখানো হয় ৭ কোটি ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৩০৩ টাকা, যা পূর্ববর্তী নির্বাচনি হলফনামায় দাখিল করা অর্থের প্রায় ৭ গুণ। ২০২৩ সালে জমা করা অর্থের পরিমাণ আবার কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬০৭ টাকা। কৃষি খাতে আয়েও উত্থান-পতন:  ২০০৮ সালে কৃষি খাত থেকে শেখ হাসিনার বার্ষিক আয় ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় দেখানো হয় ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে কৃষি খাত থেকে আয় দেখানো হয় ৩ লাখ টাকা। আর ২০২৩ সালে প্রায় তিন গুণ বেড়ে আয় হয় ৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। শেষ নির্বাচনের আগে হাতে ছিল মাত্র সাড়ে ২৮ হাজার টাকা: ২০০৮ সালে দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায়, শেখ হাসিনার কাছে নগদ দেড় লাখ টাকা ছিল, ২০১৩ সালে ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ছিল ৮৪ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে ছিল মাত্র সাড়ে ২৮ হাজার টাকা। ১৫ বছর স্বর্ণ কেনেননি এক রতিও :  নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার স্বর্ণ, অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারের মূল‍্য ছিল ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে তিনি কোনো স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু বা অলংকার কেনেনি। কোনো আসবাবপত্র কেনা হয়নি: চারটি হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোনো আসবাবপত্র কেনেননি শেখ হাসিনা। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। এই ১৫ বছরে তিনি কোনো আসবাবপত্রও কেনেননি। নিজের কোনো ঋণ নেই, রাষ্ট্রের ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ গুণ:  ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত চারটি সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার দাখিল করা প্রতিটি হলফনামায় দেখা যায়, তিনি একক, যৌথভাবে বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল কোনো সদস্য অথবা কোনো ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ঋণ নেননি। তবে ১৫ বছর শেখ হাসিনা ব‍্যক্তিগতভাবে কোনো ঋণ না নিলেও, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি জানিয়েছে, এই সময়ে রাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৬ গুণ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। আর তিনি ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার সময় দেশি ও বিদেশি যে ঋণের বোঝা রেখে গেছেন, তা স্থানীয় মুদ্রায় ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ২১ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি: ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৩ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় এ সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে, ৬ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৮ সালে এ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৭৮৭ টাকা। তবে, ২০২৪ সালের হলফনামায় এ সম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ১০৭ টাকা। রাজউক আইন ভঙ্গ করে পূর্বাচলে প্লট:  ক্ষমতার ১৫ বছরে বহুবার জোর গলায় ‘রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি … ’, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই’ বললেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন শহর পূর্বাচল প্রকল্পে শেখ হাসিনা তাঁর পুরো পরিবারের নামে মোট ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর দুই সন্তান রেদওয়ান সিদ্দিক ববি ও মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন। তবে ২০২৪ সালের হলফনামায় শুধু শেখ হাসিনার নামে বরাদ্দ করা প্লটের কথা উল্লেখ আছে, যার মূল‍্য দেখানো হয় ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। রাজউকের প্রচলিত আইন

নতুন টাকার জাজিমে ঘুমাতেন আমির হোসেন আমু

টাকার জাজিমে (তোশক) না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। তিনি ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক। নতুন টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রথম পছন্দ। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো ‘নতুন টাকার বান্ডিল’। নতুন টাকার বান্ডিল দিয়ে জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন তিনি। আমির হোসেন আমুর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন তার ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফখরুল মজিদ কিরন। তিনি আবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের ভাই। তারও এপিএস ছিলেন কিরন। আমুর শ্যালিকা মেরী আক্তার ও কিরন দম্পতির কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক নিয়েছিলেন নিঃসন্তান আমু। এই সুমাইয়া ও কিরনের কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত রাখা। সুমাইয়া বর্তমানে স্বামীসহ দুবাইপ্রবাসী। সেখানে হুন্ডিসহ নানা উপায়ে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন আমু। এমন তথ্য জানান তারই ঘনিষ্ঠজন। গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকা ও ডলার-ইউরো। আংশিক পোড়া অবস্থায় ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও লাগেজ ভর্তি ডলার এবং ইউরো উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে পাওয়া যায় টাকা ও বিদেশি মুদ্রা মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা। আমুর মগবাজার ও বরিশাল শহরের বাড়ি থেকেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা হয়। সেগুলো আমলে নিয়ে প্রাক-অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে কমিশন।   প্রাক-অনুসন্ধানের পর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমির হোসেন আমু তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। এই খাত থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজে মোটা অঙ্কের টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করতেন। ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কে ৭২৭/এ নম্বর বাড়িতে কেয়ারি প্লাজায় রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ দশমিক ৭২ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং মিরপুরের রূপনগরে ১ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট। তার একটি গাড়ি রয়েছে। আমুর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগ পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকা। তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকা। উল্লিখিত সম্পদের বাইরে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্য আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত হয়েছে।’   এদিকে গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাসভবন থেকে ডলার ও ইউরোসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ওইদিন শহরের রোনালসে রোডের আমির হোসেন আমুর বাসভবনে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাগেজভর্তি টাকা ও ডলার দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর সময় পানি নিক্ষেপ করলে পোড়া লাগেজ থেকে ডলার ও টাকার বান্ডিল বেরিয়ে আসে। একটি লাগেজে অক্ষত ১ কোটি এবং অন্য লাগেজগুলো থেকে গণনা করে আংশিক পোড়া ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ডলার ও ইউরো উদ্ধার করা হয় আরও প্রায় ৩ কোটি টাকার। আমুর ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ঢাকার মগবাজারের বাড়ি ছাড়াও আমুর বরিশাল শহরে ও ঝালকাঠিতে বাড়ি রয়েছে। আমু ব্যাংক লেনদেনে আস্থা ছিল না। তিনি সবসময় নিজের কাছে নগদ টাকা রাখায় বিশ্বাসী ছিলেন। টাকার জাজিম বানিয়ে তার ওপর ঘুমাতেন। কোনো তদবিরে কেউ তার কাছে গেলে তাকে ব্যাগভর্তি নতুন টাকার বান্ডিল দিতে হতো। এসব টাকা নিজের কাছেই রাখতেন। তার ভায়রা কিরনের মাধ্যমে এসব লেনদেন সম্পন্ন করতেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, টাকার জাজিমে না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। নতুন টাটকা টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রিয়। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো নতুন টাকা। আমুর সম্পত্তির মধ্যে ঝালকাঠির রোনালস রোডে ভবন, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে প্রাসাদসম আলিশান বাড়ি এবং রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর তেমন আস্থা বা ভরসা না থাকায় বস্তায় বস্তায় টাকা রাখতেন বাড়িতে, যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট। বিক্ষুব্ধ জনতা ওইরাতে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় তার রোনালস রোডের বাড়িতে। ভাঙচুর চলাকালেই বহু মানুষকে টাকার বান্ডিল হাতে বের হতে দেখেছেন স্থানীয়রা। ব্যক্তিজীবনে নিঃসন্তান আমু তার শ্যালিকা মেরী আক্তারের কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক হিসেবে নিয়েছিলেন বহু বছর আগে। বর্তমানে দুবাইতে থাকা এই সুমাইয়ার বিয়ে হয়েছে দুবাইপ্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। অবৈধ পন্থায় আয় করা শতকোটি টাকা সুমাইয়ার কাছে পাঠিয়েছেন আমু। ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না আমু। সব টাকাই নগদে পৌঁছাত তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরন। আমুর নাম ভাঙিয়ে কিরন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন কিরন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনেরও এপিএস ছিলেন এই কিরন। তিনি আমু ও হুমায়ুনের হয়ে সব তদবির নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিরনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের আপন ছোট ভাই কিরন তার নিজের এলাকা ছেড়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠিতে। কেবল সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি।’ নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালবেলাকে বলেন, আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নেওয়া লাগত কিরনের। উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি। তার কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না আমু। পরিস্থিতি এমন ছিল—কিরন যেন ছিলেন ছায়া আমু। এই কিরনের মাধ্যমেই বিভিন্ন সেক্টর থেকে শতশত কোটি টাকা কামিয়েছেন আমু, যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইয়ে কিরনের মেয়ে সুমাইয়ার কাছে আছে বলে ধারণা সবার। নতুন টাকা ছাড়া আমুর আরেকটি শখ ছিল স্বর্ণের নৌকা। যে কোনো অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ করলে স্বর্ণের নৌকা উপহার দিতে হতো। তিনি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বর্ণের নৌকা উপহার নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকে আমু স্বর্ণের নৌকা নেওয়া বন্ধ করেন। গত ১৮ আগস্ট আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সময় তার পালিত সন্তান ও মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাংক লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আর প্রকাশ্যে আসেননি আমির হোসেন আমু। তিনি দেশে আছেন না পালিয়ে গেছেন—সেই তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে।

বেয়াদব! আমার এজলাস থেকে বের হও, থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে পুলিশে দেব; আইনজীবীকে বিচারপতি! (ভিডিও)

আদালতের কার্যতালিকায় অনিয়মের অভিযোগ দিতে গেলে আইনজীবীকে থাপ্পড় মেরে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন বিচারপতি। এতে বিচারকক্ষে শুরু হয় আইনজীবীদের হট্টগোল। এমন পরিস্থিতিতে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতি। পরে অভিযোগ দিলে ওই বিচারপতির বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বিচারিক ক্ষমতা হারানো বিচারপতির নাম আতাউর রহমান খান। জানা যায়, আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে মামলার শুনানির শুরুতে মেনশনের সময় আইনজীবীদের পক্ষে ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান আদালতে বলেন, মাননীয় আদালত আপনার আদালতের বেঞ্চ অফিসাররা অনিয়ম করে সকল জমাকৃত মামলা ঠিকমত দৈনিক কার্যতালিকায় দেননি। এতে অসংখ্য আইনজীবী বঞ্চিত হয়েছেন। উত্তরে বিচারপতি আতাউর রহমান খান ওই আইনজীবীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হাত উঁচিয়ে বলেন, আমি বারের নেতা ছিলাম। তোমাকে কে সাহস দিয়েছে, আমার আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলতে? আমার এজলাস থেকে বের হও, বেয়াদব। তোকে থাপ্পড় দিয়ে পুলিশে দেব। এ সময় বিচারকক্ষে আইনজীবী বলেন, আমি তো শুরুতে অ্যাপোলজি চেয়ে আপনার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করছি। মাই লর্ড আপনি এভাবে আচরণ করতে পারেন না। জবাবে, বিচারপতি আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় আইনজীবীরা আদালত কক্ষে হট্টগোল, হৈ চৈ শুরু করলে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতি আতাউর রহমান খান। ঘটনার পর প্রধান বিচারপতির কাছে আইনজীবীরা অভিযোগ দিলে ওই বিচারপতির বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার স্থানে বিচারপতি কাজী জিনাত হককে বেঞ্চের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পরে ব্যারিস্টার আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

চায়ের দাওয়াত ১২ বিচারপতিকে, হারাতে পারেন বিচারিক ক্ষমতা!

বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সকালে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা যায়, এই ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। ধারনা করা হচ্ছে, এই ১২ বিচারপতি আর বিচারকার্যে ফিরতে পারবেন না। তারা বিচারিক ক্ষমতা হারাতে পারেন। এদিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এ ঘোষণা দেন। কর্মসূচি ঘিরে বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে হাইকোর্টসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকে হাইকোর্ট মাজার গেটসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকেও রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।